ads

শিরোনাম :

সাতক্ষীরা শহরে ভোগান্তি বাড়াচ্ছে যানজট



সাতক্ষীরা শহরে ভোগান্তি বাড়াচ্ছে যানজট

নিজস্ব প্রতিনিধি : সাতক্ষীরা জেলা শহরে যানজট এখন নিত্যদিনের সঙ্গী। বিশেষ করে সকাল ও বিকালের ব্যস্ত সময়ে শহরের প্রধান সড়কগুলোতে দেখা যায় তীব্র যানজট। যা জনজীবনে চরম ভোগান্তি তৈরি করছে। যানজটের কারণে বিশেষ করে শিক্ষার্থী, রোগী, চাকুরীজীবি ও সাধারণ পথচারীরা বেশি ভোগান্তির শিকার হচ্ছেন। ভুক্তভোগীরা বলছেন, শহরের এই যানজটের অন্যতম প্রধান কারণ হলো জেলার বাইরে থেকে আসা অতিরিক্ত ইজিবাইক, মাহেন্দ্রা (থ্রি-হুইলার) ও ব্যাটারিচালিত ভ্যান। সাতক্ষীরার সচেতন মহলের দাবি, ‘সাতক্ষীরা শহরের রাস্তাগুলো তুলনামূলকভাবে সরু ও অপরিকল্পিত। অথচ প্রতিদিন বিভিন্ন উপজেলা ও ইউনিয়ন থেকে হাজার হাজার ইজিবাইক এবং মাহেন্দ্রা-বাটারিচালিত ভ্যান শহরে প্রবেশ করছে যাত্রী পরিবহনের উদ্দেশ্যে। এদের বেশিরভাগেরই কোনো নির্দিষ্ট রুট পারমিট বা লাইসেন্স নেই। ফলে এদের চলাচল নিয়ন্ত্রণ করা যাচ্ছে না, বরং শহরের প্রতিটি মোড়ে, বাজার এলাকায় ও গুরুত্বপূর্ণ সড়কে অবাধে চলাচল এবং অস্থায়ী স্ট্যান্ড বানিয়ে দীর্ঘ সময় যাত্রীর অপেক্ষায় দাড়িয়ে থেকে যানজট সৃষ্টি করছে।

স্থানীয় ব্যবসায়ী ও পথচারীরা বলছেন, “সকাল-বিকালে শহরে চলাফেরা করা দুঃসহ হয়ে উঠেছে। বিশেষ করে সাতক্ষীরা শহরের জনগুরুত্বপূর্ণ হাটের মোড়, সংগীতা মোড়, কেষ্ট ময়রার মোড়, পাকাপোল মোড়, পিএনস্কুল মোড়, নিউমার্কেট মোড়, খুলনা রোড মোড় এলাকায় যানজট নিত্যদিনের ঘটনা। অনেক সময় ৫ মিনিটের রাস্তা পাড়ি দিতে আধা ঘণ্টা লেগে যায়।” 

সাতক্ষীরা সরকারি বালিকা বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী আয়েশা সিদ্দিকা জানান, ‘প্রায় প্রতিদিন সকালে স্কুলে যাওয়ার সময় নিউ মার্কেট মোড় থেকে শুরু করে পাকাপোল পর্যন্ত রাস্তায় যানজট থাকে। যানজটের ফলে প্রায় সময় স্কুলে পৌঁছাতে দেরি হয়। এই যানজটের মধ্যেও ইজিবাইক গুলো যাত্রীর জন্য রাস্তার যেখানে সেখানে দাড়িয়ে পড়ে। এতে যানজট আরো দীর্ঘ হয়’। 

অ্যাম্বুলেন্স চালক মঈনুল ইসলাম জানান, ‘সাতক্ষীরা শহরের এখন প্রতিনিয়ত যানজট লেগে থাকে। অনেক সময় রোগী নিয়ে যানজটে দাড়িয়ে থাকতে হয়। মানুষ এখন অ্যাম্বুলেন্সকেও সাইড দিতে চায় না। অ্যাম্বুলেন্সে রোগী থাকলেও যানজটে দীর্ঘ সময় দাড়িয়ে থাকা লাগে। যানজট নিরসনে প্রশাসনকে বিকল্প ব্যবস্থা গ্রহণ করা জরুরী। 

একজন বেসরকারী চাকুরিজীবি আরিফুল ইসলাম জানান, ‘সাতক্ষীরা নিউ মার্কেট মোড় অত্যন্ত জনগুরুত্বপূর্ণ একটি জায়গা। কিন্তু সরকারিভাবে কোন যানবাহনের স্টপেজ না থাকলেও প্রতিদিন রাস্তার উপরে মাহেন্দ্রা রেখে যাত্রী ওঠা-নামা করায়। এছাড়া সেখানে রাস্তার উপরেই মাহেন্দ্রা স্ট্যান্ড তৈরি করে ফেলেছে। যানজট হয় মানুষ রোদে ধুলায় যানজটে দাড়িয়ে থাকে, অথচ মাহেন্দ্রাগুলো রাস্তার উপরে এলোমেলো ভাবে দাড় করিয়ে যাত্রী উঠায়। এসব অবৈধ স্ট্যান্ডগুলো উচ্ছেদ করলে যানজট কিছুটা কমতে পারে। এ ব্যাপারে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের নজর দেওয়া উচিৎ’।

জানা গেছে, ‘শহরে চলাচলের জন্য সাতক্ষীরা পৌরসভা থেকে ৬৯৫টি ইজিবাইকের অনুমোদন দেওয়া আছে। কিন্তু সাতক্ষীরা শহরে প্রতিদিন গড়ে এক হাজার পাঁচশো থেকে দুই হাজার ইজিবাইক চলাচল করে’। সম্প্রতি জেলা যাত্রী ও পণ্য পরিবহন কমিটির সভায় এবং জেলা আইনশৃঙ্খলা কমিটির সভায় সাতক্ষীরা শহরের যানজট নিরসনে বিভিন্ন প্রস্তাবনা ও কর্মসূচির কথা উল্লেখ হলেও বাস্তবে তার বিন্দুমাত্র প্রয়োগ হয় না বলে দাবি করছেন জেলা সচেতন মহল।  জেলার সচেতন মহলের দাবি সাতক্ষীরা শহরের যানজট নিরসনে শহরে প্রবেশের নির্দিষ্ট পয়েন্টে ইজিবাইক ও মাহেন্দ্রার প্রবেশ সীমিত করতে হবে, বিকল্প রুট চালু ও ট্রাফিক ব্যবস্থাপনা আধুনিকায়ন করতে হবে, অবৈধ যানবাহন শনাক্ত করে আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে, শহরের গুরুত্বপূর্ণ মোড়গুলোতে ট্রাফিক পুলিশ মোতায়েন বৃদ্ধি করতে হবে। তাহলে যানজট নিরসন সম্ভব হবে। এ ব্যাপারে সাতক্ষীরার নাগরিকরা এখন দ্রæত ও কার্যকর পদক্ষেপের অপেক্ষায়। নতুবা যানজটের এই সমস্যা শহরের স্বাভাবিক জীবনযাত্রাকে আরও অচল করে তুলবে বলে আশঙ্কা করছেন সচেতন মহল।


No comments